Header Ads

মিথ্য বলা থেকে দুরেথাকুন

আমাদের বিবাহের এক বছর পরের কথা।
.
রাত নয়টা।ল্যাপটপে বসে অফিসের কাজ
করছিলাম। হঠাৎ বউ এসে:-
--এই শুনছ
--হুম শুনছি বল।
--আরে আমার দিকে তাকাও না।
--দেখছ কাজ করতেছি।কাজ করার সময়
বিরক্ত কর কেন বলত।
--সারাদিন
তাহলে অফিসে কি করেছিলা।
--অফিসে একটা নতুন মেয়ে কলিগ এসেছে।
তার সাথে গল্প করেছিলাম।মেয়েটি
যা সুন্দর না।আর কন্ঠটা উফ কি বলব (সম্পূর্ন
মিথ্যে কথা।বউ কে রাগানোর জন্য এই
কথা গুলা বলা)
--কি বললা তুমি।অফিসে গিয়ে তুমি কাজ
ফেলে মেয়েদের সাথে গল্প কর।
(অভিমানি কন্ঠে)
--শুনতেই যখন পেয়েছ।আবার
আমাকে জিজ্ঞাস করছ কেন।


.
এই কথা শুনার পর বউ আমার
সামনে থেকে চলে গেল।
প্রায় ২০ মিনিট
পর ল্যাপটপ বন্ধ করে বন্যাকে
(আমার বউয়ের নাম)
খুজতে লাগলাম।সারা বাড়ির
কোথাও খুজে পেলাম না।তাই শেষ
ঠিকানা ছাদ।কারন বউ আমার সাথে রাগ
করলেই ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। তাই
ছুটে গেলাম ছাদে।
গিয়ে দেখি আমার
ধারনাই ঠিক। বউ ছাদের
এককোনে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু তার রাগ
কমানোর উপায় খুজে পেলাম না। ছোট
বেলা থেকে আমার একটা বদ অভ্যাস ছিল।
যদি কেউ আমার সাথে রাগ
ধরে তাহলে আমি তার
রাগটা না কমিয়ে বাড়িয়ে দেই। এবারও
তাই করলাম।ফোনের একটা মেয়ের
সাথে কথা বলার অভিনয় করলাম।
(নিচের সব গুলা কথাই আমার বলা)
--হ্যালো রিক্তা কেমন আছ
(সাজানো নাম)
--হ্যা হ্যা আমি ভাল আছি।আজ কিন্তু
অনেক গল্প করলাম।
--আর হ্যা প্রতিদিন গল্প করব। দরকার
হলে অফিসে কাজ বাসায় এসে করব।
--আর তোমার গালের বাম
পাশে তিলটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিল।
--আচ্ছা এখন রাখি বায়।
.
ফোন রেখে বন্যার দিকে তাকাতেই
দেখি বন্যা চোখ মুছছে। তখন নিজের উপর
খারাপ লাগল।মনে হচ্ছে আজ একটু
বেশি করে ফেলেছি।
আসলে কাজটা ঠিক হইনি।
তাই তাকে পিছন
থেকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু তার মুখে কোন শব্দ নেই।
আগে যদি তাকে জড়িয়ে ধরতাম
তাহলে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করত।
কিন্তু আজ শুধু দাড়িয়ে আছে।
রাত্রে খাবার
টেবিলে তার মুখে কোন কথা নেই।
যে মেয়ে এক মিনিট চুপ থাকতে পারে না।
আজ সে চুপ করে আছে।
রাত্রে আমাদের
মাঝে কোন কথা হয়নি।
যে যার মত
শুয়ে পরি।
.
প্রতিদিন
ভোরবেলা বন্যা আমাকে নামাজ পড়ার
জন্য ডাক দিত।কিন্তু এখনও ডাক দেয়নি।
মসজিদের আযান
কানে ভেসে এসেছে কিন্তু
বন্যা এখনো ডাক দেয়নি।
চোখ মেলে দেখি বন্যা পাশে নেই।
ভাবলাম হয়ত অজু করতে গেছে।
তার ডাকের অপেক্ষায় আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।সেই ঘুম
ভাংল সকাল আটটা বাজে।
নিজের কাছে কেমন জানি একটা খটকা লাগল।
সকাল আটটা বাজে এখন পর্যন্ত
সে আমাকে ডাক দেয়নি।
তাই বিছানা ছেড়ে উঠে তাকে খুজতে লাগলাম।
ছাদে গেলাম সেখানেও পেলাম না।
রুমে এসে দেখি টেবিলে একটা সাদা কাগজ পড়ে আছে যার
উপর একটি কলম রাখা।
কাগজটা খুলতেই,
"আমি চলে গেলাম তোমার কাছ থেকে।
কারন তোমাকে এতটাই
ভালবেসে ফেলেছিলাম।তোমার
পাশে অন্য একজনকে দেখব
চিন্তা করতে পারিনি।আর হ্যা কাল
রাত্রে তোমাকে যে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম
তা হল আমি মা হতে চলেছি আর
তুমি বাবা।
আর ভাল থেকে"।
.
লেখাটা পড়ার পর নিজের উপর খারাপ
লাগল।
তার সাথে মজা করতে গিয়ে উল্টা একটা ঘটনা হল।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ওকে ফোন
দিলাম।
ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠে:-
--হ্যালো (সে লোকটি)
--আমার স্ত্রীর মোবাইল আপনার
হাতে কেন।
_
-- এএতা আপনার স্ত্রী।
আমি হে।
তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি ওমুক
(একটা নাম বলে) হাসপাতালে চলে আসুন।
--কেন কি হয়েছে।
--আসলে ওনি ফেরার
পথে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
--এক্সিডেন্ট (তখন আমার মাথায় যেন আকাশ
ভেংগে পড়ল)
.
ফোনটা কেটে দিয়ে ছুটে চললাম
হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালে গিয়ে প্রথম তার দেখা পেলাম না।
কারন ওকে ওটিতে নেয়া হয়েছে।
যে লোকটি ফোন ধরেছিল সেই
লোকটি আমাকে সব কিছু
বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল।
একটু পর বাসার সবাই চলে আসল।
কারন আমি আসার সময়
সবাইকে ফোন করে তার এক্সিডেন্টের
কথা বলেছিলাম। ক্ষনিক সময় পর ডাক্তার
বের হয়ে আসলেন। এসেই যা বললেন তার
জন্য আমরা বা আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম
না।
কারন সে আর এ পৃথিবীতে নেই। নিজের
উপর তখন এতটাই খারাপ লাগছিল যা বলার মত নয়।
আসলে আমি মজা করতে গিয়ে ছোট্ট
একটা মিথ্যার কারনে আজ তাকে আমার
কাছ থেকে দুরে চলে যেতে হল।
.
বি.দ্র:-লেখাটি আমার কল্পনার জগত
থেকে নেয়া।
আর এই লেখাটির একটিই
উদ্দেশ্য।
আমরা মজা করার
ছলে মিথ্যা বলি।
কিন্তু সেই
মিথ্যাটা অনেক সময় বড় কোন বিপদ
ডেকে আনে। আর তাই
মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন।

No comments

Theme images by chuwy. Powered by Blogger.